ঈশান পুরের আতঙ্ক( পর্ব-১) জিৎ বাগ
ভৈরব বলছি শোন মাসি যেতে বারণ করেছে। এখন যাওয়াটা ঠিক হবে না। কেন রে? কেন যেতে বারণ করেছে, দেখ যাওয়া যেহেতু ঠিক হয়ে গেছে শেষ মুহূর্তে এসে বন্ধ করলে হবে না। আমি কিন্তু কাল ই বেরোবো। আর তোকে আমাকে নিয়ে যেতেই হবে। দেখ মাসি কিন্তু বারবার আমাদের যেতে বারণ করছে সুতরাং যাওয়াটা ঠিক হবে না শোন আমার কথাটা উফ কি কারণটা অন্তত বল নাকি প্রত্যেকবারের মতো তোর একটা অজুহাত। না ঈশান পুরের নাকি কি একটা সমস্যা হয়েছে সেই সমস্যার জন্যই আমাদের যেতে বারণ করেছে। কিন্তু তিনি চিঠিতে সমস্যাটি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি তাই আমিও তোকে বলতে পারব না কারণটা কি তবে মাসে যেহেতু বারণ করেছে আমাদের যাওয়াটা কি ঠিক হবে তাই আর কি বলছি আমরা যাব না। দেখ ঈশানপুর একটা সমস্যা আছে সেটা আমি খবর পেয়েছি তোর মাসির বাড়ি নয় গোটা গ্রামে একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমার গুরুদেব সেটা বলেছে আমাকে আমি তোর মাসির বাড়ি ঘুরতে যাওয়ার জন্য যাব না ওখানে সমস্যাটা দূর করারই আমার উদ্দেশ্য আছে সুতরাং কালকে সকালে আমরা বের হচ্ছি।
ভৈরব এই কথাটা শুনে আমার খুব অবাক মনে হল তবে যেহেতু ও বলছে যাবে তাকে আমি নিয়ে যাব তাই সেই মতো আমরা পরের দিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম ঈশানপুর এর উদ্দেশ্যে। গরুর গাড়িতে করে আমরা রওনা দিলাম তবে বহুদূরে রাস্তা তাই যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এমনই যে আমাদের হাড় পাঁজর সব যেন এক হয়ে গেল। ব্যথায় আমরা গাড়ি থেকে নামতে পাই না কিন্তু নামলেই কি এতদূর রাস্তা হেঁটে হেঁটে কি যাওয়া যায় তাই এই গরুর গাড়িতে করেই যেতে হল।
ঈশানপুর পুরুলিয়া প্রত্যন্ত গ্রামে আমার মাসির বাড়ি।আমরা রাত্রে পৌঁছালাম। পৌঁছে মাসি যখন দরজা খুললেন তিনি দেখে এতদিন পরে এসেছি আনন্দিত না হয়ে তার মুখে যেন এক ভয়ের ছাপ। তিনি কেমন আছি না জিজ্ঞাসা করে সরাসরি বললেন তাকে তো আসতে বারণ করেছিলাম তার সত্ত্বেও এলি। আমরা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলাম সারাদিনের যাত্রায় অনেক ধকল গেছে তাই মাসির কথার উত্তর না দিয়েই মাসিকে বললাম। মাসি ও ভৌরব আমার বন্ধু ও কেউ নিয়ে এসেছি। আমি নিজের মাথায় দোষটা না নিয়ে ভৈরবের মাথাতেই দোষটা চাপিয়ে দিলাম বললাম ভৈরবী আমাকে জোর করেছিল তোমাদের বাড়ি নিয়ে আসার জন্য। আর তাই বন্ধুর কথা ফেলতে পারিনি। তাই তোমার বাড়ি চলে এলাম। ঠিক আছে, সারাদিনের ধ্কল গেছে, রাতের খাবার সেরে ফেলবি আয়। কুন্তলা আমার মাসির মেয়ে আমাদের শোবার ঘর দেখিয়ে দিল। রাত্রি তখন একটা তিরিশ হবে এক শিয়ালের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল আমার আমি কাজ করে দেখলাম ভৈরব আমার পাশে শুয়ে নেই সে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং সে যেন দাঁড়িয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ করছে, চাঁদের আলো জানলায় এসে পড়েছে এবং তাতে তার অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাই আমাকে খুঁজতে বেশি অসুবিধা হলো না আমি ওকে ডেকে বললাম কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে কেন এত রাতে আমি জানি ভৈরব একটু মন্ত্র তন্ত সাধনা এইসবে করে ওইসব বিষয়ে সিদ্ধহস্ত কিন্তু এইখানে এসে এইসব করবে সেটা আমার মনে হয়নি একবার ও।
ওকে বললাম চ সুবিচল অনেক রাত হয়েছে ও আবার যেন শিয়াল ডেকে বলল তবে এবারে একটি শিয়াল নয়, একাধিক-শিয়াল উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠলো।শুনলি রক্তিম এই এই ডাক শুনলি এখনো সাধারণ সংকেত নয় এ খুব বড়সড়ো কিছু হতে চলেছে এই গ্রামে। দূরের ওই জঙ্গলে এই শিয়ালের ডাক ওই জঙ্গলের সচিবতা কে প্রমাণ করছে। ওই জঙ্গল জেগে উঠেছে সে প্রতিশোধ চাইছে। আর সে সেটা করার জন্য আরও শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে। কি যে উল্টোপাল্টা বকছিস রাতে কাল সকালে উঠে এ বিষয়ে কথা হবে চল শুয়ে পড়বি চ।
সকালে মাসি ডাকতেন ভৈরব এর সঙ্গে আজ গ্রামটা ঘুরে দেখার পালা অনেক দিনই হয়ে গেল আমি মাসির বাড়ি এসেছি তাই অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আর আমাদের সাথে আছে কোন তলা আমি অনেক পথ ভুলে গেছি তাই কুন্তলা আমাদের পথ দেখিয়ে গ্রামটা ঘোড়াবে।
আমরা প্রথমে মন্দিরে গেলাম দেবী চন্দ্র ভৈরবীর মন্দির।ছোটবেলায় যা দেখে গিয়েছিলাম মন্দিরটা ঠিক একই আছে এবং সেই রুদ্ররূপী মায়ের মূর্তি সেই উজ্জ্বল চোখ গলায় মুন্ডমালা হাতে খর্গ।
0 মন্তব্যসমূহ